হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ০৩/১১/২০২৫ ৯:৪৪ এএম

উখিয়া–টেকনাফ আসন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের শুরু হয়েছে আলোচনা। দীর্ঘদিন ধরে এ আসনটিকে বিএনপির ঘাঁটি বলা হলেও এবার মাঠে নতুন সমীকরণ—দারুণ সংগঠিতভাবে উঠে আসছে জামায়াত। স্থানীয়রা বলছেন, গত তিন মাসে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় ঘরে ঘরে গিয়ে বিশেষ করে নারী ভোটারদের ‘দাড়িপাল্লা’য় টানতে সক্ষম হয়েছে তারা। কক্সবাজারের চারটি আসনের মধ্যে উখিয়া–টেকনাফে জামায়াতের জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি—এমন কথাও এখন মানুষের মুখে মুখে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের উত্থানের পেছনে মূল কারণ মাঠপর্যায়ের সংগঠন এবং নেতৃত্বে মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারির গ্রহণযোগ্যতা। কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমির এই নেতাকে সৎ ও নির্ভরযোগ্য রাজনীতিক হিসেবে এলাকার মানুষ জানে। ফলে বিএনপি ও জামায়াতের দ্বন্দ্ব নয়, বরং এই আসনে এখন প্রশ্ন—কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে।
ঢাকায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—মনোনয়ন দেব একজনকে, কিন্তু নির্বাচনে কাজ করবেন সবাই। দলের বিপর্যয় যেন না ঘটে—এটাই আমার প্রত্যাশা।

অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী

তারেক রহমানের এই নির্দেশনার পর উখিয়া–টেকনাফের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কক্সবাজার জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমরা সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি—যাকে দল মনোনয়ন দেবে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে মাঠে কাজ করব। কেউ উল্লাসে মেতে উঠবেন না, আতশবাজি ফোটাবেন না। কারণ ব্যক্তি নয়, দলই আমাদের শক্তি।
তিনি আরও বলেন, আমি কক্সবাজার জেলার নেতা-কর্মীদের বলব—ধৈর্য ধরুন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা কৌশল ঠিক করে এগোবো। বিএনপির ঐক্যই আগামী নির্বাচনের মূল শক্তি।
রাজনীতিতে ‘লক্ষী আসন’ নামে পরিচিত এই উখিয়া–টেকনাফ আসনের ইতিহাসও বেশ ব্যতিক্রম। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসন থেকে যে দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন, সরকার গঠন করেছে সেই দলই। গত ১২টি নির্বাচনে এই সূত্র একটিও ব্যর্থ হয়নি।
এই আসনের সবচেয়ে আলোচিত নাম নিঃসন্দেহে বিএনপির শাহজাহান চৌধুরী। চারবারের এমপি, একবার জাতীয় সংসদের হুইপ, একাধিক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান—দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি আটবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চারবার জয় পেয়েছেন, চারবার হেরেছেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা হারাননি।
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির মনোনয়ন নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। পুরোনো অভিজ্ঞ শাহজাহান চৌধুরী আবারও প্রার্থী হতে চান, অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ এবং উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরীও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনজনই অপেক্ষায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের।
রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন—যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হয়, তাহলে বিএনপি শক্ত লড়াই দিতে পারে। তবে জামায়াত যদি গোপন দলের ভোটে অংশ নেয় এবং চৌধুরী পরিবারের প্রতি আংশিক ক্ষোভ ভোটে রূপ নেয়, তাহলে হতে পারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। শেষ মুহূর্তের হিসাবই পাল্টে দিতে পারে ফলাফল।
সব মিলিয়ে, কক্সবাজার-৪ আসন আবারও রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে। ইতিহাস বলছে—যে দল এই আসন জেতে, সরকার গঠন করে সেই দলই। তাই উখিয়া–টেকনাফের ভোটযুদ্ধ এবার শুধু এক আসনের লড়াই নয়, জাতীয় রাজনীতির গতিপথও নির্ধারণ করতে পারে এই ‘লক্ষী আসন’।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে ফিরে দেখা—উখিয়া–টেকনাফ আসন
১৯৭৩: আওয়ামী লীগের অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী

১৯৭৯: বিএনপির শাহজাহান চৌধুরী

১৯৮৬ ও ১৯৮৮: জাতীয় পার্টির আলহাজ্ব আবদুল গফুর চৌধুরী ও আবদুল গনি

১৯৯১ ও ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬: বিএনপির শাহজাহান চৌধুরী

জুন ১৯৯৬: আওয়ামী লীগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী

২০০১: বিএনপির শাহজাহান চৌধুরী

২০০৮ ও ২০১৪: আওয়ামী লীগের আবদুর রহমান বদি

২০১৮ ও ২০২৪: আওয়ামী লীগের শাহীন আক্তার চৌধুরী

অর্থাৎ, এ আসনে জয়ী দলই প্রতি বার সরকার গঠন করেছে। আর তাই এখন প্রশ্ন—২০২৫ সালের নির্বাচনে ‘লক্ষী আসন’-এর ভাগ্য কার হাতে উঠবে?

পাঠকের মতামত

টেকনাফে দখলে থাকা মন্দির পরিদর্শনে বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের নেতারা

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন দক্ষিণ হ্নীলা (নীলা) বড় বৌদ্ধ বিহারটি দীর্ঘদিনধরে অবৈধভাবে ...

মনোনয়নপত্র বিতরণ কাল; উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের নির্বাচন ৮ নভেম্বর

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন ২০২৫-এর তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। শনিবার (১ ...

উন্মুক্ত হলেও সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে না জাহাজ : পর্যটকহীনতা ও শর্তই মূল বাধা

সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরও নভেম্বর মাসে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ ...